Monday, June 5, 2017

niramis

নিরামিষ আহার করেনএমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে মোটেও কম নয়। আক্ষরিক অর্থে অনেক ক্ষেত্রেই তা নিরামিষ নয়। যেমনÑ অনেকে হলেন ‘‘ল্যাকটো-ওভো ভেজিটারিয়ান’। তারা মাছ, মাংস, মুরগি, হাঁস খান না। তবে ডিম, ডিম দিয়ে তৈরি খাবার, দধি, পনির, দুধ, আইসক্রিম গ্রহণ করেন। আবার অনেকে ‘ল্যাকটো-ভেজিটারিয়ান’। তারা মাছ, মাংস, মোরগ, হাঁস, ডিম খান না। তবে নিরামিষের সঙ্গে দুধ ও দুধজাত খাদ্য থাকে। দুধ, আইসক্রিমÑ যেগুলোয় ডিম থাকে না, তাও খান। দধি ও পনির খান। আইসক্রিম অনেক সময় খান না। বেক করা খাবার, প্যানকেক ও সবজি বার্গারÑ যাতে ডিম থাকে, সেগুলো খান না। যারা একেবারে নিরামিষাশীÑ তারা মাছ, মাংস, মোরগ, হাঁস, ডিম, দুধ, দুধজাত দ্রব্য খান না। এমনকি অনেকে মধুও খান না। অনেকে মাংস, মাছ, ডিম খান না নানা কারণে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত, ধর্মীয়, অনেকে প্রাণীস্বার্থ সংরক্ষণের কারণেও। মাংসে অবশ্য আছে অনেক আবশ্যকীয় পুষ্টি উপকরণ। মাছ-মাংসে আছে সম্পূর্ণ আমিষ অর্থাৎ এ থেকে পাওয়া যায় দেহের জন্য আবশ্যকীয় সব পুষ্টি উপকরণ। মাংস থেকে আরও পাওয়া যায় দস্তা, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন বি-৬, লৌহ, নিয়াসিন। এসব ভিটামিন বিপাককর্ম, অ্যান্টিবডি গঠন, লোহিত কণিকা গঠন, স্নায়ুর কাজকর্ম, স্বাদ-গন্ধ চেতনা ও ঘা শুকানোর কাজে লাগে। তবে মাংস না খেয়েও পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়। নিরামিষাশী হলে পুষ্টির ঘাটতি হয় না। নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে আমিষ। ডাল, সয়াবিন, শিমের বিচি, মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি, বাদাম, প্রোটিন গুঁড়া, ডিম ও দুগ্ধজাত দ্রব্য থেকে পুষ্টি আহরণ করা যায়। বেশিরভাগ মানুষের দেহের প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন হয় ০.৪ গ্রাম। ওই সঙ্গে মাল্টিভিটামিন বড়ি খেলে ভালো। তবে ভিটামিন বড়ি খাদ্যের বিকল্প হতে পারে না। এমন অনেক খাদ্যবস্তু আছেÑ যা বি ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও লৌহ দ্বারা সমৃদ্ধ করা হয় (ঋড়ৎঃরভরবফ)। খাদ্যের সঙ্গে ভিটামিন সি খেলে লৌহের শোষণ ভালো হয়। যেমনÑ একটি কমলার সঙ্গে থাকে লৌহ দ্বারা সমৃদ্ধ শস্যের খাদ্য।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা কি নিরামিষাশী হতে পারেন? অবশ্যই। মাধ্যম পন্থাÑ শ্বেতসার, ফল, দুধ, শস্যদানা, সবজিÑ সব সীমিত পরিমাণে। নিরামিষাশী হলে কিছু সুবিধাও আছে। অনেক গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক সমীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নিরামিষ খেলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে। যারা নিরামিষাশী, তাদের রক্তে ক্ষতিকর এলডিএন মান কম থাকে। কম থাকে রক্তচাপ, উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি অনেক কমে। কমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও আমিষ যারা খান, তাদের তুলনায় বটে। যারা এ ছাড়া নিরামিষাশীÑ তাদের বডিমাস ইনডেক্স (বিএমআই) থাকে কম, ক্যানসারও হয় কম। ক্রনিক রোগ হ্রাস করতে পারে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে নিরামিষ খাদ্যে। যেমনÑ সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল কম, প্রচুর থাকে ফল, সবজি, গোটা শস্য, বাদাম, সয়াবিন, আঁশ ও ফাইটোকেমিক্যালস। তবে পরিবারের অন্যরা নিরামিষ না খেলে একজনের পক্ষে নিরামিষাশী হওয়া কঠিন হতে পারে। রান্নার গুণে নিরামিষ অত্যন্ত স্বাদু খাদ্য হতে পারে। পোস্তবড়া, বেগুন ভাজা, সয়াবিন দিয়ে নিরামিষ, পনির দিয়ে নিরামিষ, কাঁকরোলের পুর, নারিকেলের থোড়, লাবড়া চমৎকার নিরামিষ। আরও রেসিপি আছেÑ আমাদের মা-দিদারা জানতেন। তা অমৃত স্বাদ। এসব খেলে আর আমিষ খেতে মন চাইবে না। তরুণদের জন্যও নিরামিষ সুষম হলে হিতকরই হবে। মাংস না খেলে কী হয়! প্রায় প্রতি আইটেমে বিনস, শিমের বিচি, মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি দিয়ে হয় ভাপে সিদ্ধ সবজি, শাক স্যুপ, সবজি স্যুপÑ চমৎকার লাগবে
তৃতীয় অধ্যায়। పిఱసి গুণাগুণ ।—কারবেল্লমকৃষ্যঞ্চ রোচনং কফপিত্তজিৎ । (রাজবল্লভ) করোল বা উচ্ছে ধাতু পুষ্টিকর নহে কিন্তু রুচিকর এবং কফ ও পিত্তনাশক । ১০৪ । পাকা উচ্ছে পোড়া । প্রণালী –পাক লাল উচ্ছে পোড়াইয়া খাইতেই ভাল ; পুড়িলে পর তেল, সুন মাখিয়া থা ও । ১০৫ ৷ কীচকলা ভাতে । প্রণালী --কাচকলার সবুজ থোস পরিস্কার করিয়া ছাড়াইয়া, মোট চালের ভাতে সিদ্ধ করিতে ফেলিয়া দিবে। ইহা সরিষা তেল, মুন, কঁচালঙ্কা ও একটু লেবুর রস মাখিয়া খাইবে । গুণাগুণ –কচি কলাভাহে লঘু, ধারক ও পুষ্টিকর। ১০৬ ৷ ট্যাড্রস সিদ্ধ । প্রণালী।-চোদ পনেরটি ট্যাড়স জলে সিদ্ধ করিতে চড়াইয়া দাও ; আধ ঘণ্টা ধরিয়া সিদ্ধ হইলে নামাও । এইবারে আtধ কঁাচ্চ ঘি চড়াইয়া সিদ্ধ ট্যাড়সগুলা তাহাতে ফেলিয়া দাও ; এক চুটকি ভর মুন দাও, মিনিট পাচ সাত নাড়িয়া চাড়িয়া নামাইয়া রাখ । ভোজন বিধি – ইহা খিচুড়ি ফেন্সাভাত এবং মাংসের রোষ্টের সঙ্গে ও থাইয়া থাকে । ১ e ৭ । ট্যাড়ল ভাতে । কচি ট্যfড়দ শুধু জলে অথবা ভাতেও সিদ্ধ করিয়া শুদ্ধ অথবা SBBSBBB BBBS BBBBB KBBB BBB BS00
অগ্রহায়ণ মাসের "সাহিত্যে' শ্রীযুক্ত চন্দ্রনাথ বসু মহাশয় আহার নামক এক প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। তাঁহার মতে আহারের দুই উদ্দেশ্য, দেহের পুষ্টিসাধন ও আত্মার শক্তিবর্ধন। তিনি বলেন, আহারে দেহের পুষ্টি হয় এ কথা সকল দেশের লোকই জানে, কিন্তু আত্মার শক্তিবর্ধনও যে উহার একটা কার্যের মধ্যে--এ-রহস্য কেবল ভারতবর্ষেই বিদিত; কেবল ইংরেজি শিখিয়া এই নিগূঢ় তথ্য ভুলিয়া ইংরেজি শিক্ষিতগণ লোভের তাড়নায় পাশব আহারে প্রবৃত্ত হইয়াছেন এবং ধর্মশীলতা শ্রমশীলতা ব্যাধিহীনতা দীর্ঘজীবিতা, হৃদয়ের কমনীয়তা, চরিত্রের নির্মলতা, সাত্ত্বিকতা আধ্যাত্মিকতা সমস্ত হারাইতে বসিয়াছেন; তিনি বলেন, এই আহার-তথ্যের "শিক্ষা গুরুপুরোহিতেরা দিলেই ভালো হয়। কিন্তু তাঁহারা যদি এ শিক্ষা দিতে অক্ষম হন তবে শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রকেই এ শিক্ষা দিতে হইবে"। এই বলিয়া তিনি নিজে উক্ত কার্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন; এবং ব্রাহ্মণ অধ্যাপকের দৃষ্টান্ত দেখাইয়া প্রকাশ করিয়াছেন, "নিরামিষ আহারে দেহ মন  উভয়েরই যেরূপ পুষ্টি হয়, আমিষযুক্ত আহারে সেরূপ হয় না।"

এই লেখা সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য নিম্নে প্রকাশ করিলাম। নিশ্চয়ই লেখকমহাশয়ের অগোচর নাই যে, ইংরেজিশিক্ষিত নব্যগণ যে কেবল আমিষ খান তাহা নয়, তাঁহারা গুরুবাক্য মানেন না। কতকগুলি কথা আছে যাহার উপরে তর্কবিতর্ক চলিতে পারে । আহার প্রসঙ্গটি সেই শ্রেণীভুক্ত। লেখকমহাশয় তাঁহার প্রবন্ধে কেবল একটিমাত্র যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন এবং তাহা উক্ত রচনার সর্বপ্রান্তে নিবিষ্ট করিয়াছেন; সেটি তাঁহার স্বাক্ষর শ্রী চন্দ্রনাথ বসু। পূর্বকালের বাদশাহেরা যখন কাহারো মুণ্ড আনিতে বলিতেন তখন আদেশপত্রে এইরূপ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত যুক্তি প্রয়োগ করিতেন ; এবং গুরুপুরোহিতেরাও সচরাচর নানা কারণে এইরূপ যুক্তিকেই সর্বপ্রাধান্য দিয়া থাকেন। কিন্তু ইংরেজ বাদশাহ কাহারো মুণ্ডপাত করিবার পূর্বে বিস্তারিত যুক্তিনির্দেশ বাহুল্য জ্ঞান করেন না, এবং ইংরেজ গুরু মত জাহির করিবার পূর্বে প্রমাণ প্রয়োগ করিতে না পারিলে গুরুপদ হইতে বিচ্যুত হন। আমরা অবস্থাগতিকে সেই ইংরেজরাজের প্রজা, সেই ইংরেজ গুরুর ছাত্র, অতএব চন্দ্রনাথবাবুর স্বাক্ষরের প্রতি আমাদের যথোচিত শ্রদ্ধা থাকিলেও তাহা ছাড়াও আমরা প্রমাণ প্রত্যাশা করিয়া থাকি। ইহাকে কুশিক্ষা বা সুশিক্ষা যাহাই বল, অবস্থাটা এইরূপ।

প্রাচীন ভারতবর্ষে আহার সম্বন্ধে কী নিগূঢ় তত্ত্ব প্রচলিত ছিল জানি না এবং চন্দ্রনাথবাবুও নব্যশিক্ষিতদের নিকটে তাহা গোপন করিয়াই গেছেন, কিন্তু রাজেন্দ্রলাল মিত্র মহোদয় প্রমাণ করিয়াছেন প্রাচীন ভারতের আহার্য্যের মধ্যে মাংসের চলন না ছিল এমন নহে।

এক সময়ে ব্রাহ্মণেরা আমিষ ত্যাগ করিয়াছিলেন; কিন্তু একমাত্র ব্রাহ্মণের দ্বারা কোনো সমাজ রচিত হইতে পারে না। ভারতবর্ষে কেবল বিংশতি কোটি অধ্যাপক পুরোহিত এবং তপস্বীর প্রাদুর্ভাব হইলে অতি সত্বরই সেই সুপবিত্র জনসংখ্যার হ্রাস হইবার সম্ভাবনা। প্রাচীন ভারতবর্ষে ধ্যানশীল ব্রাহ্মণও ছিল এবং কর্মশীল ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্রও ছিল, মগজও ছিল মাংসপেশীও ছিল, সুতরাং স্বাভাবিক আবশ্যক-অনুসারে আমিষও ছিল নিরামিষও ছিল, আচারের সংযমও ছিল আচারের অপেক্ষাকৃত স্বাধীনতাও ছিল। যখন সমাজে ক্ষত্রিয়তেজ ছিল তখনই ব্রাহ্মণের সাত্ত্বিকতা উজ্জ্বলভাবে শোভা পাইত--শক্তি থাকিলে যেমন ক্ষমা শোভা পায়, সেইরূপ। অবশেষে সমাজ যখন আপনার যৌবনতেজ হারাইয়া আগাগোড়া সকলে মিলিয়া সাত্ত্বিক সাজিতে বসিল, কর্মনিষ্ঠ সকল বর্ণ ব্রাহ্মণের সহিত লিপ্ত হইয়া লুপ্ত হইয়া গেল, এই বৃহৎ ভূভাগে কেবল ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণের পদানুবর্তী একটা ছায়ামাত্র অবশিষ্ট রহিল তখনই প্রাচীন ভারতবর্ষের বিনাশ হইল। তখন নিস্তেজতাই আধ্যাত্মিকতার অনুকরণ করিয়া অতি সহজে যন্ত্রাচারী এবং কর্মক্ষেত্রের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হইয়া উঠিল। ভীরুর ধৈর্য আপনাকে মহতের ধৈর্য বলিয়া পরিচয় দিল, নিশ্চেষ্টতা বৈরাগ্যের ভেক ধারণ করিল এবং দুর্ভাগা অক্ষম ভারতবর্ষ ব্রাহ্মণ্যহীন  ব্রাহ্মণের গোরুটি হইয়া তাঁহারই ঘানিগাছের চতুর্দিকে নিয়ত প্রদক্ষিণ করিয়া পবিত্র চরণতলের তৈল জোগাইতে লাগিল। এমন সংযম এমন বদ্ধ নিয়ম, এমন নিরামিষ সাত্ত্বিকতার দৃষ্টান্ত কোথায় পাওয়া যাইবে। আজকাল চোখের ঠুলি খুলিয়া অনেকে ঘানি-প্রদক্ষিণের পবিত্র নিগূঢ়তত্ত্ব ভুলিয়া যাইতেছে। কী আক্ষেপের বিষয়।

এক হিসাবে শঙ্করাচার্যের আধুনিক ভারতবর্ষকেই প্রাচীন ভারতবর্ষ বলা যাইতে পারে; কারণ, ভারতবর্ষ তখন এমনই জরাগ্রস্ত হইয়াছে যে, তাহার জীবনের লক্ষণ আর বড়ো নাই। সেই মৃতপ্রায় সমাজকে শুভ্র আধ্যাত্মিক বিশেষণে সজ্জিত করিয়া তাহাকেই আমাদের আদর্শস্থল বলিয়া প্রচার করিতেছি, তাহার কারণ, আমাদের সহিত তাহার তেমন অনৈক্য নাই। কিন্তু মহাভারতের মহাভারতবর্ষকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে যে-প্রচণ্ড বীর্য, বিপুল উদ্যমের আবশ্যক তাহা কেবলমাত্র নিরামিষ ও সাত্ত্বিক নহে, অর্থাৎ কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ অধ্যাপকের আবাদ করিলে সে-ভারতবর্ষ উৎপন্ন হইবে না।

আহারের সহিত আত্মার যোগ আর-কোনো দেশ আবিষ্কার করিতে পারিয়াছিল কি না জানি না কিন্তু প্রাচীন য়ুরোপের যাজকসম্প্রদায়ের মধ্যেও আহারব্যবহার এবং জীবনযাত্রা কঠিন নিয়মের দ্বারা সংযত ছিল। কিন্তু সেই উপবাসকৃশ যাজকসম্প্রদায়ই কি প্রাচীন য়ুরোপ। তখনকার য়ুরোপীয় ক্ষত্রিয়মণ্ডলীও কি ছিল না। এইরূপ বিপরীত শক্তির ঐক্যই কি সমাজের প্রকৃত জীবন নহে।

কোনো বিশেষ আহারে আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি পায় বলিতে কী বুঝায়।--মনুষ্যের মধ্যে যে-একটি কর্তৃশক্তি আছে, যে-শক্তি স্থায়ী সুখের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া ক্ষণিক সুখ বিসর্জন করে, ভবিষ্যৎকে উপলব্ধি করিয়া বর্তমানকে চালিত করে, সংসারের কার্যনির্বাহার্থ আমাদের যে-সকল প্রবৃত্তি আছে প্রভুর ন্যায় তাহাদিগকে যথাপথে নিয়োগ করে, তাহাকেই যদি আধ্যাত্মিক শক্তি বলে তবে স্বল্পাহারে বা বিশেষ আহারে সেই শক্তি বৃদ্ধি হয় কী করিয়া আলোচনা করিয়া দেখা যাক।

খাদ্যরসের সহিত আত্মার যোগ কোথায়, এবং আহারের অন্তর্গত কোন্‌ কোন্‌ উপাদান বিশেষরূপে আধ্যাত্মিক; বিজ্ঞানে তাহা এ পর্যন্ত নির্দিষ্ট হয় নাই। যদি তৎসম্বন্ধে  কোনো রহস্য শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদিগের গোচর হইয়া থাকে, তবে অক্ষম গুরুপুরোহিতের প্রতি ভারার্পণ না করিয়া চন্দ্রনাথবাবু নিজে তাহা প্রকাশ করিলে আজিকার এই নব্য  পাশবাচারের দিনে বিশেষ উপকারে আসিত।

এ কথা সত্য বটে স্বল্পাহার এবং অনাহার প্রবৃত্তিনাশের একটি উপায়। সকল প্রকার নিবৃত্তির এমন সরল পথ আর নাই। কিন্তু প্রবৃত্তিকে বিনাশ করার নামই যে আধ্যাত্মিক শক্তির বৃদ্ধিসাধন তাহা নহে।

মনে করো, প্রভুর নিয়োগক্রমে লোকাকীর্ণ রাজপথে আমাকে চার ঘোড়ার গাড়ি হাঁকাইয়া চলিতে হয়। কাজটা খুব শক্ত হইতে পারে কিন্তু ঘোড়াগুলার দানা বন্ধ করিয়া তাহাদিগকে আধমরা করিয়া রাখিলে কেবল ঘোড়ার চলৎশক্তি কমিবে, কিন্তু তাহাতে যে আমার সারথ্যশক্তি বাড়িবে এমন কেহ বলিতে পারে না। ঘোড়াকে যদি তোমার শত্রুই স্থির করিয়া থাক তবে রথযাত্রাটা একেবারে বন্ধই রাখিতে হয়। প্রবৃত্তিকে যদি রিপু জ্ঞান করিয়া থাক তবে শত্রুহীন হইতে গেলে আত্মহত্যা করা আবশ্যক, কিন্তু তদ্‌দ্বারা আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ে কি না তাহার প্রমাণ দুষ্প্রাপ্য।

গীতায় "শ্রীকৃষ্ণ কর্মকে মনুষ্যের শ্রেষ্ঠপথ বলিয়া নির্দিষ্ট করিয়াছেন" তাহার কারণ কী। তাহার কারণ এই যে, কর্মেই মনুষ্যের কর্তৃশক্তি বা আধ্যাত্মিকতার বলবৃদ্ধি হয়। কর্মেই মনুষ্যের সমুদয় প্রবৃত্তি পরিচালনা করিতে হয় এবং সংযত করিতেও হয়। কর্ম যতই বিচিত্র, বৃহৎ এবং প্রবল, আত্মনিয়োগ এবং আত্মসংযমের চর্চা ততই অধিক। এঞ্জিনের পক্ষে বাষ্প যেমন, কর্মানুষ্ঠানের পক্ষে প্রবৃত্তি সেইরূপ। এঞ্জিনে যেমন এক দিকে ক্রমাগত কয়লার খোরাক দিয়া আগ্নেয় শক্তি উত্তেজিত করিয়া তোলা হইতেছে আর-এক দিকে তেমনি দুর্ভেদ্য লৌহবল তাহাকে গ্রহণ ও ধারণ করিয়া স্বকার্যে নিয়োগ করিতেছে, মনুষ্যের জীবনযাত্রাও সেইরূপ। সমস্ত আগুন নিবাইয়া দিয়া সাত্ত্বিক ঠাণ্ডা জলের মধ্যে শীতকালের সরীসৃপের মতো নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকাকেই যদি মুক্তির উপায় বল তবে সে এক স্বতন্ত্র কথা। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সে উপদেশ নহে। প্রবৃত্তির সাহায্যে কর্মের সাধন এবং কর্মের দ্বারা প্রবৃত্তির দমনই সর্বোৎকৃষ্ট। অর্থাৎ মনোজ শক্তিকে নানা শক্তিতে রূপান্তরিত ও বিভক্ত করিয়া চালনা করার দ্বারাই কর্মসাধন এবং আত্মকর্তৃত্ব উভয়েরই চর্চা হয়-- খোরাক বন্ধ করিয়া প্রবৃত্তির শ্বাসরোধ করা আধ্যাত্মিক আলস্যের একটা কৌশলমাত্র।

তবে এমন কথা উঠিতে পারে যে, প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে জীবমাত্রেরই আহারের প্রতি একটা আকর্ষণ আছে; যদি মধ্যে মধ্যে এক-একদিন আহার রহিত করিয়া অথবা প্রত্যহ আহার হ্রাস করিয়া সেই আকর্ষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা যায় তবে তদ্‌দ্বারা আত্মশক্তির চালনা হইয়া আধ্যাত্মিক বললাভ হয়। এ সম্বন্ধে কথা এই যে, মাঝিগিরিই যাহার নিয়ত ব্যবসায়, শখের দাঁড় টানিয়া শরীরচালনা তাহার পক্ষে নিতান্তই বাহুল্য। সংসারের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে প্রতিদিনই এত সংযমচর্চার আবশ্যক এবং অবসর আছে যে শখের সংযম বাহুল্যমাত্র। এমন অনেক লোক দেখা যায় যাঁহারা জপ তপ উপবাস ব্রতচারণে নানাপ্রকার সংযম পালন করেন, কিন্তু সাংসারিক বৈষয়িক বিষয়ে তাঁহাদের কিছুমাত্র সংযম নাই। শখের সংযমের প্রধান আশঙ্কাই তাই। লোকে মনে করে যখন সংযমচর্চার স্বতন্ত্র ক্ষেত্র কঠিনরূপে নির্দিষ্ট হইয়াছে তখন কর্মক্ষেত্রে ঢিলা দিলেও চলে। অনেক সময় ইহার ফল হয়, খেলায় সংযম এবং কাজে স্বেচ্ছাচারিতা, মুখে জপ এবং অন্তরে কুচক্রান্ত, ব্রাহ্মণকে দান এবং ব্যবসায়ে প্রতারণা, গঙ্গাস্নানের নিষ্ঠা এবং চরিত্রের অপবিত্রতা।

যাহা হউক, কর্মানুষ্ঠানকেই যদি মনুষ্যের পক্ষে শ্রেষ্ঠ পথ বল, এবং কেবল ঘর-সংসার করাকেই একমাত্র কর্ম না বল, যদি ঘরের বাহিরেও সুবৃহৎ সংসার থাকে এবং সংসারের বৃহৎ কার্যও যদি আমাদের মহৎ কর্তব্য হয় তবে শরীরকে নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বলিয়া ঘৃণা করিলে চলিবে না; তবে শারীরিক বল ও শারীরিক উদ্যমকে আধ্যাত্মিকতার অঙ্গ বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে।

তাহা হইলে বিচার্য এই যে, শরীরের বলসাধনের পক্ষে সামিষ এবং নিরামিষ আহারের কাহার কিরূপ ফল সে বিষয়ে আমার কিছু বলা শোভা পায় না এবং ডাক্তারের মধ্যেও নানা মত। কিন্তু চন্দ্রনাথবাবু নিজ মত প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি বলেন :

নিরামিষ আহারে দেহ মন উভয়েরই যেরূপ পুষ্টি হয়, আমিষযুক্ত আহারে সেরূপ হয় না।

আমরা এক শতাব্দীর ঊর্ধ্বকাল একটি প্রবল আমিষাশী জাতির দেহমনের সাতিশয় পুষ্টি অস্থিমজ্জায় অনুভব করিয়া আসিতেছি, মতপ্রচারের উৎসাহে চন্দ্রনাথবাবু সহসা তাহাদিগকে কী করিয়া ভুলিয়া গেলেন বুঝিতে পারি না। তাহারাই কি আমাদিগকে ভোলে, না আমরাই তাহাদিগকে ভুলিতে পারি? তাহাদের দেহের পুষ্টি মুষ্টির অগ্রভাগে আমাদের নাসার সম্মুখে সর্বদাই উদ্যত হইয়া আছে, এবং তাহাদের মনের পুষ্টি যদি অস্বীকার করি তবে তাহাতে আমাদেরই বোধশক্তির অক্ষমতা প্রকাশ পায়।

প্রমাণস্থলে লেখকমহাশয় হবিষ্যাশী অধ্যাপকপণ্ডিতের সহিত আমিষাশী নব্য বাঙালির তুলনা করিয়াছেন। এইরূপ তুলনা নানা কারণে অসংগত।

প্রথমত, মুখের এক কথাতেই তুলনা হয় না। অনির্দিষ্ট আনুমানিক তুলনার উপর নির্ভর করিয়া সর্বসাধারণের প্রতি অকাট্য মত জারি করা যাইতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, যদি-বা স্বীকার করা যায় যে, অধ্যাপকপণ্ডিতেরা মাংসাশী যুবকের অপেক্ষা বলিষ্ঠ ও দীর্ঘজীবী ছিলেন, তথাপি আহারের পার্থক্যই যে সেই প্রভেদের কারণ তাহার কোনো  প্রমাণ নাই। সকলেই জানেন অধ্যাপকপণ্ডিতের জীবন নিতান্তই নিরুদ্‌বেগ এবং আধুনিক যুবকদিগের পক্ষে জীবনযাত্রানির্বাহ বিষম উৎকণ্ঠার কারণ হইয়া পড়িয়াছে, এবং উদ্‌বেগ যেরূপ আয়ুক্ষয়কর এরূপ আর কিছুই নহে।

নিরামিষাশী শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় যতই বলিষ্ঠ ও নম্রপ্রকৃতি হউন-না কেন, তাঁহাকে "সাত্ত্বিক আহারের উৎকৃষ্টতার" প্রমাণস্বরূপে উল্লেখ করা লেখকমহাশয়ের পক্ষে যুক্তিসংগত হয় নাই। আমিও এমন কোনো লোককে জানি যিনি দুইবেলা মাংস ভোজন করেন অথচ তাঁহার মতো মাটির মানুষ দেখা যায় না। আরো এমন ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত অনেক আছে, কিন্তু সেগুলিকে প্রমাণস্বরূপে উল্লেখ করিয়া ফল কী। চন্দ্রনাথবাবুর বিবেচনা করিয়া দেখা উচিত এরূপ ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত প্রমাণস্বরূপে প্রয়োগ করিলে বুঝায় যে, তাঁহার মতে অন্যপক্ষে একজনও বলিষ্ঠ এবং নির্মলপ্রকৃতির লোক নাই।

আধুনিক শিক্ষিত যুবকদের প্রতি চন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ এই যে :

তাঁহারা অসংযতেন্দ্রিয়, তাঁহাদের সংযমশিক্ষা একেবারেই হয় না। এইজন্য তাঁহারা প্রায়ই সম্ভোগপ্রিয়, ভোগাসক্ত হইয়া থাকেন। শুধু আহারে নয়, ইন্দ্রিয়াধীন সকল কার্যেই তাঁহারা কিছু লুব্ধ, কিছু মুগ্ধ, কিছু মোহাচ্ছন্ন।

অসংযতেন্দ্রিয় এবং সংযমশিক্ষাহীন, সম্ভোগপ্রিয় এবং ভোগাসক্ত, মুগ্ধ এবং মোহাচ্ছন্ন, কথাগুলার প্রায় একই অর্থ। উপস্থিতক্ষেত্রে চন্দ্রনাথবাবুর বিশেষ বক্তব্য এই যে, নব্যদের লোভটা কিছু বেশি প্রবল।

প্রাচীন ব্রাহ্মণবটুদের ঐ প্রবৃত্তিটা যে মোটেই ছিল না, এ কথা চন্দ্রনাথবাবু বলিলেও আমরা স্বীকার করিতে পারিব না। লেখকমহাশয় লুব্ধ পশুর সহিত নব্য পশুখাদকের কোনো প্রভেদ দেখিতে পান না। কিন্তু এ কথা জগদ্‌বিখ্যাত যে, ব্রাহ্মণপণ্ডিতকে বশ করিবার প্রধান  উপায় আহার এবং দক্ষিণা। অধ্যাপকমহাশয় ঔদরিকতার দৃষ্টান্তস্থল। যিনি একদিন লুচিদধির গন্ধে উন্মনা হইয়া জাতিচ্যুত ধনীগৃহে ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান হইয়াছিলেন এবং আহারান্তে বাহিরে আসিয়া কৃত কার্য অম্লানমুখে অস্বীকার করিয়াছিলেন তাঁহারই পৌত্র আজ "চপকট্‌লেটের সৌরভে বাবুর্চি বাহাদুরের খাপরেলখচিত মুর্গিমণ্ডপাভিমুখে ছোটেন' এবং অনেকে তাহা বাহিরে আসিয়া মিথ্যাচরণপূর্বক গোপনও করেন না। উভয়ের মধ্যে কেবল সময়ের ব্যবধান কিন্তু সংযম ও সাত্ত্বিকতার বড়ো ইতরবিশেষ দেখি না। তাহা ছাড়া নব্য ব্রাহ্মণদিগের প্রাচীন  পিতৃপুরুষেরা যে ক্রোধবর্জিত ছিলেন তাঁহাদের তর্ক ও বিচারপ্রণালী দ্বারা তাহাও প্রমাণ হয় না।

যাহা হউক, প্রাচীন বঙ্গসমাজে ষড়্‌রিপু  নিতান্ত নির্জীবভাবে ছিল এবং আধুনিক সমাজে আমিষের গন্ধ পাইবামাত্র তাহারা সব ক'টা উদ্দাম হইয়া উঠিয়াছে, এটা অনেকটা লেখকমহাশয়ের  কল্পনামাত্র। তাঁহার জানা উচিত, আমরা প্রাচীন কালের যুবকদিগকে প্রত্যক্ষ দেখিতে পাই না; যাহাদিগকে দেখি তাঁহারা যৌবনলীলা বহুপূর্বে সমাধা করিয়া ভোগাসক্তির বিরুদ্ধে উপদেশ দিতে আরম্ভ করিয়াছেন। এইজন্য আমাদের সহজেই ধারণা হয়, তবে বুঝি সেকালে কেবলমাত্র হরিনাম এবং আত্মারই আমদানি ছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে যে-সকল পীতবর্ণ জীর্ণ বৈষয়িক এবং রসনিমগ্ন পরিপক্ক ভোগী বৃদ্ধ দেখা যায়, তাহাতে বুঝা যায়, সত্যযুগ আমাদের অব্যবহিত পূর্বেই ছিল না।

সামিষ এবং নিরামিষ আহারের তুলনা করা আমার উদেশ্যে নহে। আমি কেবল এইটুকু বলিতে চাহি, আহার সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখিতে গিয়া একটা ঘরগড়া দৈববাণী রচনা করা আজকালকার দিনে শোভা পায় না। এখনকার কালে যদি কোনো  দৈবদুর্যোগে কোনো লোকের মনে সহসা একটা অভ্রান্ত সত্যের আবির্ভাব হইয়া পড়ে অথচ সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রমাণ দেখা না দেয়, তবে তাঁহার একমাত্র কর্তব্য সেটাকে মনে মনে পরিপাক করা। গুরুর ভঙ্গিতে কথা বলার একটা নূতন উপদ্রব বঙ্গসাহিত্যে সম্প্রতি দেখা দিতেছে। এরূপ ভাবে সত্য কথা বলিলেও সত্যের অপমান করা হয়, কারণ সত্য কোনো লেখকের নামে বিকাইতে চাহে না, আপনার যুক্তি দ্বারা সে আপনাকে প্রমাণ করে, লেখক উপলক্ষ মাত্র।

অবশ্য, রুচিভেদে অভিজ্ঞতাভেদে আমাদের কোনো জিনিস ভালো লাগে কোনো জিনিস মন্দ লাগে, সকল সময়ে তাহার কারণ নির্দেশ করিতে পারি না। তাহার যেটুকু কারণ তাহা আমাদের সমস্ত জীবনের সহিত জড়িত, সেটাকে টানিয়া বাহির করা ভারি দুরূহ। মনের বিশেষ  গতি অনুসারে অসম্পূর্ণ প্রমাণের উপরেও আমরা অনেক মত গঠিত করিয়া থাকি; এইরূপ ভূরি ভূরি অপ্রমাণিত বিশ্বাস লইয়া আমরা সংসারযাত্রা নির্বাহ করিয়া যাই। সেইরূপ মত ও বিশ্বাস যদি ব্যক্ত করিবার ইচ্ছা হয় তবে তাহা বলিবার একটা বিশেষ ধরন আছে। একেবারে অভ্রান্ত অভ্রভেদী গুরুগৌরব ধারণ করিয়া বিশ্বসাধারণের মস্তকের উপর নিজের মতকে বেদবাক্যস্বরূপে বর্ষণ করিতে আরম্ভ করা কখনো হাস্যকর, কখনো উৎপাতজনক।

  ১২৯৮
মানুষের খাদ্য তালিকা

সুষম খাদ্য

সুষম খাদ্য (Balance diet) 
যে খাদ্যের মধ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান পরিমাণমত বর্তমান থাকে, তাকেই এক কথায় সুষম খাদ্য বলা হয়। অর্থাৎ মানবদেহের প্রয়োজণীয় ও পরিমাণমত ছয়টি উপাদানযুক্ত খাবারকেই সুষম খাদ্য হিসেবে ধরা হয়। সুষম খাদ্য দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের যোগান দেয়। এটা ব্যক্তির দেহে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের অভাব মেটায়। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের বয়স, চাহিদা ও পরিশ্রম অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। সুষম খাদ্যের মধ্যে আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্য উপাদান যেমনঃ আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি বিদ্যমান থাকে। এ সুষম খাদ্যের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বুদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদনসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়ে থাকে।

সুষম খাদ্যের তালিকা প্রণয়নের নীতিমালা 
ব্যক্তির বয়স, যোগ্যতা, প্রয়োজন ও পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে সুষম খাদ্যের তালিকা প্রস্তুত করা হয় বলে তাকে সুষম খাদ্যের মেনু বলা হয়। সুষম খাদ্যের তালিকা মেনু তৈরির সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়, যাকে সুষম খাদ্য তৈরির নীতিমালা বলা যায়। যেমনঃ
১। সুষম খাদ্যে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সকল পুষ্টি উপাদান দেহের চাহিদা মতো থাকতে হবে।
২। পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ নিধারণের সময় ব্যক্তির পেশার মূল্যায়ন করতে হবে। অধিক পরিশ্রমী ব্যক্তির জন্য অধিক পরিমাণ খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়।
৩। সুষম খাদ্যের মেনু তৈরির সময় ব্যক্তির দৈহিক চাহিদার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
৪। সুষম খাদ্য খুব দামি উপাদানসমৃদ্ধ হতে হবে, এমনটি ভাবা যাবে না।
৫। সুষম খাদ্য নির্বাচনের সময় সহজলভ্য এবং সস্তার দিক বিবেচনা করতে হবে।
৬। প্রসূতি এবং গর্ভবতী মায়েদের বেলায় সুষম খাদ্যে ভিন্নতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
৭। সুষম খাদ্যের রন্ধননীতি অবশ্যই গার্হস্থ্য অর্থনীতির বিধি মোতাবেক হতে হবে।
৮। সুষম খাদ্যের রন্ধননীতি সব সময় পরিবারের সকল সদস্যের গণতান্ত্রিক অধিকারের ভিত্তিতে হতে হবে।
৯। দৈনিক মোট ক্যালরির ৬০%-৭০% শর্করা জাতীয় খাদ্য, ৩০%-৪০% স্নেহ জাতীয় খাদ্য এবং ১০% প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণের পরিকল্পনা করতে হবে।
১০। খাদ্য প্রস্তুত এবং পরিবেশনে যথার্থভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী

মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী (Basic food groups) 
খাদ্যবস্তু কেবল গ্রহণ করলেই চলে না। দেহকে সুস্থ্য রাখতে হলে কোনটি কি পরিমাণে গ্রহণ করে দেহে খাদ্য উপাদানের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা যায়, তাও জানতে হবে। এর জন্য সমস্ত খাদ্যকে কয়েকটি দল বা বিভাগে ভাগ করা হয়। খাদ্যের উপাদান এবং দেহে খাদ্যের কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি  করে সব শ্রেনীর খাদ্যের সমন্বিত সুষম খাদ্য পরিকল্পনা করার জন্য খাদ্যসমূহকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে । এই দল বা বিভাগগুলোকে মৌলিক খাদ্য বলা হয়।
মৌলিক খাদ্য তালিকায় খাদ্যবস্তুকে এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যে, প্রতি গোষ্ঠী হতে খাদ্য নির্বাচন করে আহার প্রস্তুত করলে সুষম খাদ্য হয় অর্থাৎ দেহের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী প্রস্তুত করা হয়েছে। মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠীর চারটি বিভাগ নিম্নরূপঃ
১। দেহ গঠনকারীঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ , অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য শ্রেণী।
২। শক্তি প্রদানকারীঃ চাউল, গম ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাদ্য শ্রেণী।
৩। রোগ প্রতিরোধকারীঃ ভিটামিন জাতীয় শাক-সবজি ও ফলমূল শ্রেণী।
৪। শিশুর চাহিদা পূরনকারীঃ দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য।
 
১। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য শ্রেনীঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, সীমের বীজ, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির মাথাপিছু দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এই শ্রেণীর খাদ্য প্রোটিন ছাড়াও লোহা, ভিটামিন, থায়ামিন, নায়াসিন কালসিয়াম, ফসফরাস সরবরাহ করে থাকে। প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ উভয় প্রকার প্রোটিনই আমাদের দেহের জন্য আবশ্যক। তবে বিশেষ করে বাড়ন্ত ছেলে-মেয়ে, গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদায়ী মায়ের খাদ্যে প্রতিদিন অবশ্যই কিছু প্রাণিজ প্রোটিন থাকা উচিত।

২। শস্য জাতীয় খাদ্যঃ চাল, গম, ভুট্টা, আলু, এবং চাউল ও গম থেকে তৈরি ভাত রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি এই শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরির অর্ধেকেরও বেশি শস্য জাতীয় খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। শক্তি উৎপাদনের জন্য এবং দেহের বৃদ্ধির জন্য শস্য-জাতীয় খাদ্য একান্ত প্রয়োজন এই জাতীয় খাদ্য দামে সস্তা এবং সহজপ্রাপ্য বলে আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনও খেয়ে বেঁচে আছে ।

৩। শাক-সবজি ও ফল জাতীয় খাদ্য শ্রেনীঃ শাক-সবজি ও ফলমূল আমাদের দেহে ভিটামিন ও ধাতব লবণের চাহিদা পূরণ করে থাকে। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় শাক-সবজী ও ফলমূল এই শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত। দেহকে সুস্থ্য ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু পরিমাণ সবজি ও ফলমূল থাকা উচিত। রঙিন শাক সবজি এবং টক জাতীয় ফল ও তরকারি ভিটামিন এ ভিটামিন সি এবং ক্যারটিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

৪। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য শ্রেনীঃ দুধ জাতীয় খাদ্য যেমনঃ পানির, পায়েস, ফিরনি, ছানা, আইসক্রীম, ঘোল,দই, টাটকা দুধ, মিষ্টি ইত্যাদি খাবার দেহের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে নবজাতক শিশুর প্রাথমিক ও প্রধান খাদ্য দুধ। মানবদেহের প্রয়োজনীয় সবকয়টি ভিটামিন দুধে পাওয়া যায়। দুধ ক্যালরিবহুল ও প্রোটিনবহুল পানীয়। দুধের মধ্যে সকল প্রকার অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড পাওয়া যায় । একজন সুস্থ্য, কর্মক্ষম ব্যক্তির খাদ্যে দৈনিক ৮ আউন্স বা ১ পোয়া দুধ পরিবেশন করা দরকার।
নিম্নে খাদ্যগোষ্ঠীর তালিকা অনুসরণ করে একটি মেনু পরিকল্পনার উদাহরণ দেয়া হলঃ
সকালে
১। খাদ্যশস্য শ্রেণীআটার রুটি
২। মাছ-মাংস শ্রেণীডিম
৩। শাক-সবজি শ্রেণীআলু ভাজি
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণীপনির/মিষ্টি/১ কাপ দুধ/ দুধ মিশ্রিত চা

দুপুরে
১। খাদ্যশস্য শ্রেণীভাত
২। মাছ-মাংস শ্রেণীমাছের তরকারি
৩। শাক-সবজি শ্রেণীপুঁইশাক/পালংশাক
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণীদই/পায়েস

রাত্রে
১। খাদ্যশস্য শ্রেণীভাত/রুটি
২। মাছ-মাংস শ্রেণীমাংস
৩। শাক-সবজি শ্রেণীনিরামিষ
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত শ্রেণীদুধ/মিষ্টি

সস্তা পুষ্টিকর শাক-সবজি

স্থানীয় ও সস্তা শাক-সবজি থেকে পুষ্টিকর খাদ্য শনাক্তকরণ
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ এ দেশের অধিকাংশ জনগনই অতি দরিদ্র্য। দরিদ্র্যতার কারণে সাধারণ মানুষ সামান্য ডাল-ভাতের সংস্থাপন করতে হিমশিম খায় । বাংলাদেশের জনগণের পুষ্টিহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ এই দরিদ্রতা। তাদের পক্ষে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এ জাতীয় প্রাণিজ প্রোটিনবহুল খাদ্য যোগাড় করা খুবই কঠিন ব্যাপার। দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও কর্মশক্তি উৎপাদনের জন্য এই প্রোটিনবহুল খাদ্র অতি প্রয়োজনীয় জেনেও তাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এ জন্যে খাদ্যে এ সকল প্রাণিজ প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে ঐ প্রোটিনের অভাব অপর কোন সস্তা খাদ্য দ্বারা পূরণ করলে অল্প খরচে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা যায়। বাজেটে খাদ্যমূল্য হ্রাস করতে গিয়ে খাদ্যের কোন উপাদান বাদ দেয়া যাবে না। খাদ্যের সবগুলি উপাদানই অল্পমূল্যের খাদ্য থেকে গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। ডিম ও দুধে যে পরিমাণ প্রোটিন আছে তার চেয়ে ডালের দাম তুলনামূলক অনেক কম তাই আমরা মাছ, মাংস, ডিম, কিংবা দুধ থেকে প্রোটিন এর চাহিদা পুরোপুরি না মিটিয়ে সস্তা খাদ্য ডাল থেকে মেটানোর চেষ্টা করব। সে জন্য সাধারণ দরিদ্র ব্যক্তির খাদ্যে ডালের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সয়াবিনের মধ্যেও উচ্চমানের প্রোটিন আছে তাই সয়াবিন থেকে ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
আবার কমলালেবু, আঙ্গুর, মালটা, কাঁচা আম ইত্যাদি দুর্মূল্য খাদ্য থেকে ভিটামিন সি এর চাহিদা না মিটিয়ে দেশীয় সস্তা ফল যেমনঃ আমড়া, কতবেল, কামরাঙ্গা, জাম্বুড়া, জলপাই, চালতা ইত্যাদি খাদ্য থেকে এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আমাদের চিন্তা করতে হবে এই অধিক মূল্যের খাদ্যের সস্তা কি কি বিকল্প খাদ্য রয়েছে যা আমাদের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিম্নে একজন পূর্ণ বয়স্ক স্বাভাবিক পরিশ্রমী ব্যক্তির স্থানীয় স্বল্পমূল্যের খাদ্য থেকে সুষম খাদ্যের তালিকা দেয়া হল।

খাদ্যশস্য (চাল, আটা, ময়দা, সুজি)২৮৫ গ্রাম
মশুর, মুগ, ছোরা, মটর, খেসারি১০০ গ্রাম
মিষ্টি কুমড়া, আলু২০০ গ্রাম
কচু, বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক-সবজি১০০ গ্রাম
কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম২০০ গ্রাম
অঙ্গুরিত বীজ৫০ গ্রাম
ভোজ্য তৈল৫০ গ্রাম
ইক্ষুর রস (গুড় চিনি)৩৫ গ্রাম

বয়স ভিত্তিক খাদ্য তালিকা

পাঁচ মাসের শিশুর সুষম খাদ্য (প্রতি বেলার)
খাদ্য সামগ্রীপরিমাণ
১। চালের গুড়া তরল৩০ গ্রাম
২। পাকা পেঁপে২০ গ্রাম
৩। কচি পাতার সবজি১০ গ্রাম
৪। চিনি/মধু৫ গ্রাম
৫। দুধ৫০ গ্রাম
মোট১১৫ গ্রাম

ছয় থেকে বারো মাসের শিশুর দৈনিক খাদ্য
খাবারদৈনিক প্রয়োজনপ্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান
নরম ভাত৪/৩ ছটাক চালের (৪৫ গ্রাম)কিলো ক্যালরী:   ৬৫০
আমিষ (প্রোটিন): ২২ গ্রাম
রুটি দুধে ভিজিয়েটেবিল চামচের প্রায় ২.৫ চামচ (৪৫গ্রাম)ক্যালসিয়াম: ৩৫০ (মিঃ গ্রাম)
ডাল নরম খিচুরী করে২ চায়ের চামচ (১০ গ্রাম)লৌহ (আয়রন): ৭.৪৭ (মিঃ গ্রাম)
আলু চটকিয়েছোট ১টাভিটামিন এ : ৩১০ (আই, ইউ)
শাক পাতা ও অন্যান্য
সবজি ভাতের সাথে
১ ছটাক (৬০ গ্রাম)ক্যারোটিন : ১৬৮০ (মাঃ গ্রাম)
পাকা কলা১টা (ছোট)ভিটামিন বি২ : ০.৬৮ (মিঃ গ্রাম)
ডিম (সামর্থ থাকলে)১টাভিটামিন সি : ১৭ (মিঃ গ্রাম)

১- ৩ বছরের  শিশুর দৈনিক খাদ্য
খাবারদৈনিক প্রয়োজনপ্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান
ভাত/পিঠা/মুড়ি/চিড়া/১.৭৫ ছালের (৭৫ গ্রাম)কিলো ক্যালরীঃ ১৩৭৫
ডাল১.৫ মুষ্টি (৯০ গ্রাম)প্রোটিনঃ ৩৫ (গ্রাম)
রুটি/বিস্কুট১ ছটাক আটার (৬০ গ্রাম)ক্যালসিয়ামঃ ৫৫০ (মিঃ গ্রাম)
শাকের নিরমিষ বা ভাজি১ ছটাক (৬০ গ্রাম)আয়রনঃ ২২ (মিঃ গ্রাম)
মিষ্টি আলু১ ছটাক (৬০ গ্রাম)ভিটামিন এঃ ৩২০ (আই, ইউ)
তেল২ চা চামচ (১০ এম এল)
মাছ বা মাংসের তরকারীতে
সবজি০.৫ ছটাক (৩০ গ্রাম)ক্যারোটিনঃ ৩৭৭০ (মাঃ গ্রাম)
আলু০.৭৫ ছটাক (৪৫ গ্রাম)  
মাছ বা মাংস০.৫ ছটাক (৩০ গ্রাম)ভিটামিন বি-২ : ০.৫০ (মিঃ গ্রাম)
দুধ-ভাত/পায়েশ/ দুধ/রুটি/সুজি৪ ছটাক দুধের (২৫০ এম এল)ভিটামিন সিঃ ১৭ (মিঃ গ্রাম)
রান্নার চিনি বা গুড়১ ছটাক (৬০ গ্রাম)
ফল (মাঝারি)১টা

কিশোর-কিশোরীর সুষম খাদ্য (প্রতি বেলার জন্য)
খাদ্য সামগ্রীপরিমাণ
কিশোরীকিশোর
১। ভাত/রুটি১৫০ গ্রাম২৫০ গ্রাম
২। আলু ভর্তা/ভাজি৫০ গ্রাম৬০ গ্রাম
৩। ছোট মাছ৬০ গ্রাম৬০ গ্রাম
৪। শাক-সবজি১০০ গ্রাম১০০ গ্রাম
৫। মৌসুমী ফল১০০ গ্রাম১০০ গ্রাম
মোট৪৬০ গ্রাম৫৭০ গ্রাম
 
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক খদ্য তলিকা (সস্তা খাবার)
খাবারদৈনিক প্রয়োজনপ্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান
মোটা চাল৪ ছটাক (২৫০ গ্রাম)কিলো ক্যালরীঃ ২৭৭০
আটা৪ ছটাক (২৫০ গ্রাম)প্রোটিনঃ ৮০ গ্রাম
ডাল, সিমের বিচি মটরশুটি প্রভৃতি১.৫ ছটাক (৯০ গ্রাম)ক্যালসিয়ামঃ ৭০০ (মিঃ গ্রাম)
ছোট মাছ১ ছটাক (৬০ গ্রাম)আয়রনঃ ৬০ (মিঃ গ্রাম)
মিষ্টি আলু২ ছটাক (১২৫ গ্রাম)
শাক (কচু, সাজনা, পালং, পুঁই, লাল শাক )১.৫ ছটাক (৯০ গ্রাম)ভিটামিন- এঃ ১২৪৫ (আই,ইউ)
সবজি (সিম, উচ্ছে, ঢেঁড়ষ, পটল, লাউ প্রভৃতি)১.৫ ছটাক (৯০ গ্রাম)ভিটামিন - বি২: ১.৫ (মিঃ গ্রাম)
ফল (পেয়ারা, আমলকি, কুল, আম প্রভৃতি)২/১ টিভিটামিন- সিঃ ১৮০ (মিঃ গ্রাম)
তৈল (সয়াবিন)১ ছটাক (৬০ গ্রাম)
চিনি বা গুড়০.৫ ছটাক (৩০ গ্রাম)

পূর্ণ বয়স্ক পরিশ্রমী পুরুষের সুষম খাদ্য (প্রতি বেলার)
খাদ্য সামগ্রীপরিমাণ
১। ভাত/রুটি২৫০ গ্রাম
২। আলু ভাজি১০০ গ্রাম
৩। ছোট মাছ৮০ গ্রাম
৪। শাক-সবজি২৫০ গ্রাম
৫। মৌসুমী ফল২৫০ গ্রাম
৬। মাংস৫০ গ্রাম
৭। চিনি/গুড়২০ গ্রাম
৮। দুধ৩০০ গ্রাম
মোট১৩০০ গ্রাম

প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার দৈনিক খাদ্য তালিকা
খাবারদৈনিক প্রয়োজনপ্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান
চাল/আটা৬ ছটাক (৩৭৫ গ্রাম)কিলো ক্যালরীঃ ২১০০
ডাল০.৭৫ ছটাক (৪৫ গ্রাম)প্রোটিনঃ ৫৬ গ্রাম
শাক২.৫ ছটাক (১৫৫ গ্রাম)ক্যালসিয়ামঃ ৬০০ (মিঃ গ্রাম)
অন্যান্য সবজি১.৫ ছটাক (৯০ গ্রাম)আয়রনঃ ৪০ (মিঃ গ্রাম)
আলু/মিষ্টি আলু১ ছটাক (৬০ গ্রাম)ভিটামিন- এঃ ৩৫০ (আই,ইউ)
মাছ/মাংস/ডিম১ ছটাক (৬০ গ্রাম)ক্যারোটিনঃ ৭৫০০ (মাঃ গ্রাম)
তৈল (সয়াবিন)১ ছটাক (৬০ গ্রাম)ভিটামিন-‘বি২’: ১.১ (মিঃ গ্রাম)
ফল১ টিভিটামিন- সিঃ ৫৫ (মিঃ গ্রাম)

গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য (প্রতি বেলার)
খাদ্য সামগ্রীপরিমাণ
১। ভাত/রুটি২৬০ গ্রাম
২। টাটকা শাক১২০ গ্রাম
৩। সবজি৮০ গ্রাম
৪। ডাল (মসুর)৪০ গ্রাম
৫। ছোট মাছ/মাংস৬০ গ্রাম
৬। মৌসুমী ফল১৫০ গ্রাম
৭। চিনি/গুড়২০ গ্রাম
৮। দুধ২৫০ গ্রাম
৯। ডিম২০ গ্রাম
মোট১০০০ গ্রাম


প্রসূতি মায়ের সুষম খাদ্য (প্রতি বেলার)

খাদ্য সামগ্রীপরিমাণ
১। ভাত/রুটি২৬০ গ্রাম
২। ডাল (মসুর)৪০ গ্রাম
৩। শাক-সবজি২০০ গ্রাম
৪। ছোট মাছ৮০ গ্রাম
৫। মৌসুমী ফল২০০ গ্রাম
৬। মাছ/মাংস৬০ গ্রাম
৭। চিনি/দুধ৩০০ গ্রাম
৮। চিনি/গুড়৬০ গ্রাম
মোট১২০০ গ্রাম

বৃদ্ধের খাদ্য
বৃদ্ধ বয়সের পুষ্টি চাহিদা
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দৈহিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে ফলে তাদের খাদ্যে শর্করার প্রয়োজন কমে যায়। তাই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞগণ ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ১০ বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরীর শতকরা ৫ ভাগ কম গ্রহণ করার সুপারিশ করেছেন। তারপর ৬০ থেকে ৬৯ বছরে শতকরা ১০ ভাগ এবং ৭০ বছরের পর থেকে আরও শতকরা ১০ ভাগ ক্যালরী হ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তাদের মোট ক্যালরীর প্রায় অর্ধেক শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে নেয়া প্রয়োজন। যারা অবসর জীবন যাপন করেন তারা যদি পূর্বের মতই খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখেন তবে তারা স্থুলকায় হয়ে যাবেন। এর ফলে তারা সহজেই বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, রেনাল ডিজিস সহ বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।
বৃদ্ধ বয়সে আমিষের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না। শারীরিক বিভিন্ন অবস্থার পেক্ষিতে চাহিদার হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। এ বয়সে ফ্যাট বা চর্বির প্রয়োজন কম। অধিক চর্বি গ্রহণ হৃদরোগের কারণ হতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ফলিক এসিডের ঘাটতি হয়ে থাকে এবং যারা সূর্যের আলোতে খুব কম বের হন তাদের ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি হতে পারে। বৃদ্ধ লোকদের দৈনিক প্রচুর পানিরও প্রয়োজন। এজন্যে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি বা ফলের রস দৈনিক খাওয়া প্রয়োজন যাতে দৈনিক প্রসারের পরিমাণ আনুমানিক দেড় লিটার হতে পারে। নিচের ছকে ৪০ বৎসরের অধিক বয়সী লোকদের জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের দৈনিক চাহিদা দেখানো হলঃ

বয়সকিলো ক্যালরী (গ্রাম)আমিষ
ক্যাল-
সিয়াম (মি. গ্রাম)
লৌহ (মা. গ্রাম)
ভিটা-
মিন ‘এ’ (মা. গ্রাম)
ভিটামিন বি১ (মি. গ্রাম)ভিটামিন বি২ (মি. গ্রাম)নায়মিন (মি. গ্রাম)
ভিটা-
মিন ‘সি’ (মি. গ্রাম)
ফলিক এসিড (মা. গ্রাম)
ভিটা-
মিন ‘বি১২’ (মা. গ্রাম)
পুঃমঃপুঃমঃপুঃমঃপুঃমঃপুঃমঃপুঃমঃ
৪০- ৪৯২৬২০১৯০০৫২৪০৪৫০০৯২৮৭৫০১.৩০.৯১.৪১.০১৭.৩১২.৫৩০২০০২.৫
৫০- ৫৯২৪৮০১৮০০৫২৪০৪৫০০৯০৯৭৫০১.২০.৯১.৪১.০১৬.৪১১.৯৩০২০০২.৫
৬০- ৬৯২২১০১৬০০৫২৪০৪৫০০৯০৯৭৫০১.১০.৮১.২০.৯১১.৬১১.৬৩০২০০২.৫
৭০- ৭৯১৯০০১৪০০৫২৪০৪৫০০৯০৯৭৫০১.০০.৭১.১০.৮১২.৭১২.৭৩০২০০২.৫

বৃদ্ধ বয়সের খাদ্য পরিকল্পনা
বৃদ্ধদের জন্য পরিমার্জিত ও ভারসাম্য রক্ষা করে খাদ্য পরিকল্পনা ও নির্বাচন করা উচিত। শারীরিক সু্স্থ্যতার জন্যে বার্ধক্যে নিম্নলিখিত খাদ্যদ্রব্য প্রতিদিন অবশ্য গ্রহণ করা কর্তব্যঃ

দুধঃ ২৫০ থেকে ৪০০ মিঃ লিঃ
বিভিন্ন ফলঃ ১০০ গ্রাম
শাক সবজি বা তরকারিঃ ১০০-১২৫ গ্রাম।

তাছাড়া সপ্তাহন্তর একটি ডিম দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ছোট মাছ বা মাংস, টক জাতীয় ফল, হালকা মিষ্টি, চা ও কফি (অভ্যাস অনুযায়ী) এবং শরীরের ওজন ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনমত ভাত রুটি, অল্প মাখন ইত্যাদি দৈনিক খেতে হবে। বেশি তৈলাক্ত খাদ্য, কেক, পুডিং, অত্যাধিক মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বৃদ্ধ বয়সে না খাওয়াই ভাল।

ধনীদের যে বিষয় আপনি জানেন না

millionaire
কেউ রাতারাতি ধনী হতে পারেন না। ধনী হওয়ার জন্য চাই সাধনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনীরা এমন কিছু বিষয় জানেন, যা আপনি জানেন না। শুধু তাই নয়, বিষয়গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেন তারা, যা আপনি করেন না। আর এ কারনেই তিনি ধনী, আর আপনি গরীব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ধনী হতে আপনাকে অর্থনৈতিক মুক্তির ওপর চোখ রাখতে হবে; বর্তমানকে উৎসর্গ করতে হবে ভবিষ্যত গঠনের আশায়। এছাড়া রয়েছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যেগুলো ধনীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকেন।
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা:
সকালে ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যসম্মত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠলে স্বাস্থ্যবান, জ্ঞানী আর ধনী হওয়া যায়। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাষায়, আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইজ, মেকস অ্যা ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ।
বিশ্বে যারা ধনী তারা এই পন্থা অবলম্বন করেন, যা আপনি করেন না। তারা সকাল সকাল ওঠেই কাজে বেরিয়ে পড়েন। অর্থ আয়ের নেশায় খুঁজে পান বেশি সময়। তাই ধনী হতে চাইলে আপনারও দরকার অর্থ আয়ে সকাল সকাল ঘুব থেকে ওঠে কাজে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা।
অতিরিক্ত কাজ করছেন-এমন ধারণা ত্যাগ করা:
আপনি অতিরিক্ত কাজ করছেন এই ধারণা আপনার শত্রু হয়ে ওঠতে পারে। সব কাজ করছেন এবং করতে হবে- এমন ধারণা কাজে গড়িমসি ভাব আনতে পারে। যা আপনার ধনী হওয়ার পথে অন্যতম বাধা। তাই ধনী হতে চাইলে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। জীবনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সম্মুখ পানে।
শুরু করা:
কোনো কিছু না করার চেয়ে কিছু শুরু করাটা ভালো। তাই দ্রুত ব্যবসায় নেমে পড়তে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যাও আছে। ছোট কিছু দিয়ে শুরু করলে তার প্রাথমিক ফলও ছোট হবে। তাই বলে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। ধৈর্য্য ধরতে হবে। দেখবেন একদিন সাফল্য আসবেই।
মিতব্যয়ী হওয়া:
অকারণেই অর্থ অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হতে হবে মিতব্যয়ী। আপনি যদি আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করেন, সেটা হবে সম্পদ অর্জনের অন্তরায়। সুতরাং মাসিক খরচ কোথায় কত করলেন সেটা লক্ষ্য করতে হবে। খরচ কমানোর উপায় বের করে বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করতে হবে।
তাই ক্রেডিট কার্ড বয়ে বেড়ানোর মানসিকতা পরিহার করতে হবে। যেখানে সেখানে অর্থ ব্যয় থেকে থাকতে হবে বিরত।
গরীবের মতো জীবনযাপন করা:
আমাদের চারপাশে অনেকেই আছে যারা ধনী কিন্তু তাদের চলাফেরায় সেটা বোঝা যায় না। তারা শুধু টাকা সঞ্চয় করেন। মানুষের সামনে বড়লোকী ভাব দেখান না। এটার উপকারিতা হচ্ছে আপনাকে কম খরচ করাতে শেখাবে।
প্রলোভন এড়িয়ে চলা:
অর্থ আয় করতে হবে, অর্থ সঞ্চয় করতে হবে। তার মানে এটা নয় যে আপনাকে কারো প্রলোভন জালে জড়াতে হবে। কারণ অতিরিক্ত প্রলোভন ভালো নয়। আপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন প্রলোভন সর্বদাই এড়িয়ে চলুন। প্রলোভনকে তৈরি করুন অর্থ আয়ের মাধ্যম হিসেবে।
শিক্ষিত হওয়া:
ধনী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে শিক্ষিত হওয়া। শিক্ষা ছাড়া আপনি কোথাও উন্নতি করতে পারবেন না। বিশেষ করে একজন সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজেকে গড়তে দরকার অর্থনৈতিক ধারণা। তাই বেশি করে জানতে হবে দৈনন্দিন খবর, অর্থনৈতিক খবর।
অর্থ তৈরিতে অর্থ ব্যয় করা:
অর্থ ব্যয় করুন, বিনিয়োগ করুন। তবে তা শুধু ব্যয় নয়, এর মাধ্যমে কিভাবে সঞ্চয় বাড়ানো যায়; নতুন করে অর্থ তৈরি করা যায় সে বিষয়ে ভাবুন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করা:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কখনই এক ঝুড়িতে সব অর্থকে ঢেলে ফেলবেন না। বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই হাতে কিছু সঞ্চয় রেখে দিতে হবে। এটা আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।
https://wordpress231447.wordpress.com/category/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE/page/2/